
মোঃ কবির হাওলাদার সিনিয়র রিপোর্টার:
পটুয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালীতে সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে ৩৮টিরও বেশি লাইসেন্সবিহীন করাতকল (স্ব-মিল) গড়ে উঠেছে। এসব করাতকল বনজ সম্পদ নষ্ট এবং পরিবেশ সংকটের পাশাপাশি দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন যৌথ অভিযান পরিচালনা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। রাঙ্গাবালীর বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামীণ এলাকায় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় এসব স্বত্বাধিকারী করাতকল দিনরাত কাঠ চিরাইয়ের কাজে নিয়োজিত থাকলেও কোনো পরিবেশ ছাড়পত্র বা প্রশাসনিক অনুমোদন নেই। স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিন কোনো কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ায় অবৈধ কার্যক্রম আরো বেড়েছে এবং বনচর, পরিবেশ ও খনিজ সম্পদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এছাড়া, এসব অব্যবস্থাপনার কারণে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। গত ২১ সেপ্টেম্বর রাঙ্গাবালী বাজার সংলগ্ন আয়জুদ্দিন মেস্তুরির স্ব-মিলে মেশিনের পুলি ছিঁড়ে রব্বি হাওলাদার (২৫) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরে মিল মালিক নিহত শ্রমিকের পরিবারকে এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করে। ঘটনার ১৫ দিন পর একই মিলে আরও দুই শ্রমিক আহত হন—যা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা-ক্ষতিরই নমুনা। স্থানীয়রা বলছেন, “যদি এসব স্ব-মিলের বৈধ লাইসেন্স থাকত এবং দক্ষ শ্রমিক দ্বারা পরিচালিত হতো, তাহলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটত না।” তারা প্রশাসনের কর্যকুশলতা প্রার্থনা করেছেন এবং দাবি করেছেন দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নিক। উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম জানান, “রাঙ্গাবালী উপজেলায় করাতকল পরিচালনার কোনো অনুমোদন নেই। কেউ লাইসেন্সও পায়নি। আমরা বিষয়টি অবগত আছি, খুব শিগগিরই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে অভিযান চালানো হবে। এসব অবৈধ স-মিলের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব দাশ পুরকায়স্থ বলেন, “বন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনুসন্ধানে জানা গেছে যে কিছু বন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে—তারা গোপনে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে মৌখিক অনুমতি দিয়ে থাকেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন মিল মালিক দাবি করেছেন যে, “আমাদের কাছ থেকে প্রতি বছর পঞ্চাশ হাজার করে টাকা নিয়ে মৌখিক পার্মিশন দিয়ে থাকে বনকর্তা।” এই অভিযোগ দায়ের বা তদন্ত সাপেক্ষ — প্রশাসন কি পদক্ষেপ নেবে, তা এখন দেখার বিষয়। এতসব অবৈধ করাতকল অব্যাহত থাকলে বনজ সম্পদ ও পরিবেশের টেকসই ব্যবহার বিপন্ন হবে; পাশাপাশি স্থানীয় সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাও ঝুঁকির মুখে পড়বে। পরিবেশবাদীরা মনে করেন দৃশ্যমান অভিযান ও দায়ীদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি গভীরায়িত হবে। স্থানীয় নাগরিক ও পরিবেশকর্মীরা প্রশাসনকে দ্রুত ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন—যাতে বনসম্পদ রক্ষা ও খোঁজখবর-ভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তৎপরতা, মামলা তদন্তের অগ্রগতি ও অভিযানের বাস্তব ফলাফল জনগণ জানলে পল্লবিত হবে—তারই জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট দফতরদের কাছে দ্রুত কার্যক্রম ও প্রতিবেদন প্রত্যাশা করছি।
Leave a Reply