শাহিনুল ইসলাম উলিপুর,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে গিদারী নদীতে অবস্থিত ব্রিজটি স্রোতে ভেঙ্গে পড়েছে। ব্রিজটি দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে পান্ডুল ইউনিয়নের ৬টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ। বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) ভোররাতে নদীর তীব্র স্রোতে ব্রিজের নিচের মাটি সড়ে গিয়ে ব্রিজটি ধসে পড়ে। উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের কাগজিপাড়া গ্রামে গিদারী নদীর ওপর ওই ব্রিজের অবস্থান।
স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, স্বাধীনতার আগে কাগজিপাড়া গ্রামে গিদারী নদীর উপর ব্রিজটি নির্মিত হয়। এর পর থেকে ব্রিজটির কোনো সংস্কারকাজ হয়নি। এই ব্রিজ দিয়ে পান্ডুল ইউনিয়নের কাগজিপাড়া, আমভদ্রপাড়া, চাকলিরপাড়, জটিয়াপাড়াসহ আশপাশের ৬টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ যাতায়াত করেন,এবং কাগজি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে । গত মার্চে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) গিদারী নদীর খননকাজ শুরু করে।উজানের পানি বেশি হওয়ায় স্রোতের তিব্রতা বেড়ে যাওয়ার কারণে নিচের মাটি সরে যাওয়ার কারণে ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়ে।
পাউবোর নদীখনন প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আবদুল আজীজ জানান, ওই ব্রিজটি প্রায় অর্ধশত বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল। আর সেসময় ব্রিজটি অনেক উঁচুতে নির্মাণ করা হয়েছিল। খাল খননের পর ব্রিজের মুখ উঁচুতে উঠে যায়। ব্রিজের উজানে অতিরিক্ত পানি জমায় চাপ সহ্য করতে না পেরে ভাঙ্গন দেখা দেয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে ১ হাজার ২০০ জিও ব্যাগ ব্যবহার করে পানির স্রোত কমানোর চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু কোন ফল হয়নি। আজ বৃহস্পতিবার ভোরে ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে ব্রিজ ভেঙ্গে যাওয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আবদুল মোতালেব ও ৯ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো. জমির উদ্দিন।
ইউপি সদস্য জমির উদ্দিন জানান, স্বাধীনতার আগে নির্মান করা ব্রিজটি সংস্কারের অভাবে ধসে পরায় পান্ডুল ইউনিয়নের প্রায় ৬ গ্রামের মানুষের চলাচলে অসুবিধা হলো। ভারীবৃষ্টিতে উজানে পানি জমে তীব্র স্রোতের কারণে ব্রিজের ভাটিতে ও উজানে প্রায় তিন ফিট পানির তফাৎ হয়। ফলে স্রোতে ব্রিজের ভাটিতে মাটি সরে গিয়ে বৃহস্পতিবার ভোররাতে ভেঙ্গে পড়েছে। এর আগে ১১ অক্টোবর ব্রিজের মাঝের পিলার সম্পূর্ণ ধসে যায়। বর্তমানে মানুষ পারাপারের জন্য অস্থায়ী বাঁশকাঠের সেতু তৈরি করার পরিকল্পনা হচ্ছে। সেটি হতেও প্রায় এক সপ্তাহ সময় লাগবে বলে তিনি জানান।
অটোচালক চাকলির পাড় গ্রামের মোস্তা বলেন, এই ব্রিজের ওপর দিয়ে ৬ গ্রামের মানুষ উপজেলা শহরসহ দুর্গাপুর হাট, মিনাবাজার ও পান্ডুল ইউনিয়ন পরিষদ যাতায়াত করতো, এখন অনেক দূর ঘুরে যেতে হবে। । ইউনিয়নের কাগজিপাড়া গ্রামে কিছু হিন্দু পরিবার আছে তাঁরা মাছের ব্যাবসা করেন,মৃত নরেণ বিশ্বাসের ছেলে মনসা বিশ্বাস বলেন,আমরা গ্রামের পুকুরের মাছ নিয়ে উপজেলা শহরে যাই কিন্তু এখন মাছ নিয়ে যাতায়াতের সমস্যা সৃষ্টি হলো। ব্রিজটি ভেঙে পড়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যসহ যোগাযোগের খুব অসুবিধা হয়ে গেল। ইজিবাইক নিয়ে শহরে যাব সে উপায় আর রইলো না। এখন ৪ কিলোমিটার পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হবে।
কাগজি পাড়া গ্রামের মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে মোজাফফর আলী(৩৮) বলেন নদী খননের কাজ করার কারনে ব্রিজটি ভেঙ্গে গেলো,নদী খনন না করলে ব্রিজের কিছুই হতো না।কাগজি পাড়া গ্রামের নাবুরউদ্দিনের ছেলে আবেদ আলী (৬২) বলেন চলাচলের অসুবিধা হয়ে গেলো, কোন রুগী অসুস্থ হলে রুগীকে হাসপাতালে নিতে বহুদূর রাস্তা ঘুরে হাসপাতালে যেতে হবে, গ্রামে আগুন লাগলে ফায়ারসার্ভিসের গাড়ি আসতে বিলম্ব হবে।
এলাকাবাসিরা সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি করেন যত তারাতারি সম্ভব একটি নতুন ব্রিজ নির্মানের।
কাগজি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক(ভারপ্রাপ্ত) আছমা বেগম বলেন ব্রিজটি ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে স্কুলের শিক্ষার্থীরা অনেক ভয়ে যাতায়াত করতেছে।
উলিপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মাহমুদুর রহমান জানান, তীব্র স্রোতে ব্রিজটির মাঝের পিলার ধসে গেলে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সেতুর দুই পাশে ঝুকিপূর্ণ সাইনবোর্ড টাঙ্গানো হয়েছিল। বৃহস্পতিবার ভোররাতে ব্রিজটি ভেঙে যায় বলে শুনেছি। ইতিমধ্যে উপজেলা এলজিইডি ইঞ্জিনিয়ার কে সেতুটির জন্য উপরে প্রস্তাবনা পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। পথচারী চলাচলের জন্য গিদারী নদীর ওপরে অস্থায়ী সাঁকো তৈরি করার জন্য বরাদ্দ দিতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকেও বলা হয়েছে।
Leave a Reply