শিরোনাম :
ময়মনসিংহে দুই পৃথক হত্যাকাণ্ডে দৃষ্টান্তমূলক রায় বগুড়া শেরপুর সীমাবাড়ী ইউনিয়নে যুবদলের ও ছাত্রদলের নির্বাচনী প্রচারণা ঢাকায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে জার্মান রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ বিজয়নগরে প্রবাসীর উপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর নির্বাচনি গণসংযোগকালে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় বিক্ষোভ করেছে বিএনপি। রংপুর মহানগরের বুড়ীরহাটে, রায়হান সিরাজীর নির্বাচনী অফিস মির্জাপুরে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে ৫৬ তম টিআরসি ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়েছে তানোরে ভূমি অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি কার্যক্রম পরিদর্শনে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ড. চিত্রলেখা নাজনীন আমজনতার দলকে নিবন্ধনের আহ্বান ড. এ জেড এম মাইনুল ইসলাম পলাশের তারেক রহমানের নেতৃত্বে বগুড়ায় যে উন্নয়ন হয়েছে তা আর কেউ করেনি — ভিপি সাইফুল

বঙ্গবন্ধু এবং নেলসন মেন্ডেলার রাজনৈতিক এবং ব্যাক্তিগত জীবন পর্যালোচনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২২
  • ১৮৪ বার পঠিত

আমরা যদি বঙ্গবন্ধু এবং নেলসন মেন্ডেলার রাজনৈতিক এবং ব্যাক্তিগত জীবন পর্যালোচনা করি তাহলে দেখাতে পাই , দক্ষিণ আফ্রিকায় যুগ যুগ ধরে বর্ণবাদ প্রথা চালু ছিল বিশেষ করে শ্বেতাঙ্গ এবং কৃঞ্চাঙ্গদের মধ্যে বর্ণবৈষম্য। সে দেশে শ্বেতাঙ্গরা কৃঞ্চাঙ্গদেরকে হেয় প্রতিপূন্ন করত এবং কৃঞ্চাঙ্গদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করত, যেমন ভোট অধিকার, নির্বাচন করার অধিকার মত প্রকাশের অধিকার। সরকার আইন করে এএনসি বন্ধ করে দিয়ে ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদীত নেত নেলসন মেন্ডেলা কে যে আদালত যাবৎজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছিল সে আদালত কে রিভোনিয়া ট্রাইবুনাল বলা হয়। ১৯৬৩ সাল জোহানেসবার্গের রিভোনিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের (এএনসি) ১০ নেতাকে। তাঁদের বিরুদ্ধে আনা হয় বিদেশি যোগসাজশে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র, কমিউনিস্ট রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ। এই মামলার বিচার কার্যক্রম রিভোনিয়া ট্রায়াল নামে পরিচিত, যা ইতিহাসে ভাস্বর হয়ে আছে আদালতে দেওয়া নেলসন ম্যান্ডেলার তিন ঘণ্টা দীর্ঘ ভাষণের জন্য। রিভোনিয়ায় গ্রেপ্তার ১০ এএনসি নেতার মধ্যে নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন না। ১৯৬২ সালে অনুরূপ একটি মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া মাদিবা তখন পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ কাটাচ্ছেন। রিভোনিয়া বিচার শুরু হয় ১৯৬৪ সালে।আদালতে দাঁড়িয়ে ম্যান্ডেলা তাঁর রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি অধ্যায় নিয়ে কথা বলেছেন। কথা বলেছেন আফ্রিকার ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) প্রতিষ্ঠাকাল থেকে উমখনটো প্রতিষ্ঠার কার্যকারণ ব্যাখ্যার পাশাপাশি পরবর্তী সম্ভাব্য কর্মসূচি হিসেবে এএনসি যে গেরিলা যুদ্ধের কথাও ভেবেছে, তারও উল্লেখ করেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি এএনসির প্রতি পুরো আফ্রিকা অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ ও ব্রিটিশ রাজনীতিক গেইটসকেল ও গ্রিমন্ডের অকুণ্ঠ সমর্থনের কথাও। কথা হচ্ছে এই সব তিনি কী কারণে এতটা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরলেন? আদালতে তিনি ও তাঁর সহঅভিযুক্তরা শুধু নিজেদের আত্মপক্ষ সমর্থন করলেই পারতেন। এটিই বরং তাঁদের আইনি সুরক্ষা দিতে পারত বেশি। কিন্তু ম্যান্ডেলা, ভবিষ্যৎ আফ্রিকার মাদিবা সেই পথে হাঁটলেন না। তিনি বরং আদালতে কথা বলার সুযোগটি নিতে চাইলেন, যার মাধ্যমে তিনি তখনকার দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের নিপীড়ক চরিত্র উন্মোচনের পাশাপাশি একটি বর্ণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে ছড়িয়ে দেন।

 

 

 

ওই দিনের বক্তব্যে মাদিবা পুরো আফ্রিকার অর্থনৈতিক ও সামাজিক চিত্রও তুলে ধরেন। শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য এবং এই বৈষম্য টিকিয়ে রাখতে প্রণীত বিভিন্ন আইনের উল্লেখ করে তিনি শেষ পর্যন্ত ‘শ্রেণিহীন সমাজ’-এর প্রতি নিজের পক্ষপাতের কথা তুলে ধরেন। তিন ঘণ্টার এই বক্তব্যে কার্ল মার্কসের প্রসঙ্গ এসেছে। এসেছে মহাত্মা গান্ধীসহ বিশ্বের অন্যান্য মহান নেতার কথা। ছিল ম্যাগনা কার্টাসহ গণতন্ত্রের সনদগুলোর উল্লেখ। অনেকটা বিদায়ী ভাষণের মতো করে দেওয়া সেই বক্তব্যের শেষ অংশটি ছিল সর্বতোভাবেই ঐতিহাসিক।

বক্তব্যের একেবারে শেষে এসে মাদিবা বললেন, ‘আফ্রিকার মানুষের লড়াইয়ের জন্য আমি আমার এই পুরো জীবন উৎসর্গ করেছি। আমি শ্বেতাঙ্গ কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে লড়েছি, লড়েছি কৃষ্ণাঙ্গ কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধেও। আমি সেই গণতান্ত্রিক ও মুক্ত সমাজের জয়গান গেয়েছি, যেখানে সবাই সমান সুযোগ নিয়ে সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে একসঙ্গে থাকবে। এটা এমন এক আদর্শ, যা আমি অর্জন করতে চাই, যার জন্য বাঁচতে চাই আমি। কিন্তু যদি প্রয়োজন হয়, এটি সেই আদর্শ, যার জন্য আমি মরতেও প্রস্তুত।’

 

এই বিচার শুরুর আগেই গুঞ্জন ছিল যে, অভিযুক্তদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে। কিন্তু নেলসন ম্যান্ডেলার এই ভাষণে এমন কিছু ইঙ্গিত ছিল, যা শাসকগোষ্ঠীকে এমন পদক্ষেপ নিতে বারিত করেছে। ফলে সরকারি কৌঁসুলি আদালতে এমনকি অভিযুক্তদের মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি শোনানোর আবেদনও করেননি। শেষ পর্যন্ত আদালত নেলসন ম্যান্ডেলাসহ অন্য অভিযুক্তদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছিল। (উৎস প্রথম আলো ও ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল)

 

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতীক জীবন এবং মাদিবার রাজনৈতিক জীবন যেন একই মুদ্রার এ পিট ও পিট। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুসহ আসামী ছিল ৩৫ জন। মিথ্যা মামলায় বঙ্গবন্ধুকে আটক করা হল। পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুসহ সকল আসামীদের বিরুদ্ধে রাস্ট্রদ্রোহ মামল দিলেন, আসাম ত্রিপুরা সহ ভারত সরকারের সাথে আতাত করে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলে আসামীদের প্রেপ্তার করা হল । অথচ আগরতলার আলোচনার বিষয় ছিল ছয় দফার ভিত্তিতে কি ভাবে বাঙ্গালীর অধিকার এবং দাবী পূরণ করা যায় সে বিষয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হয় ১৮ ই জানুয়ারী ১৯৬৮ সালে । আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী সার্জেন জহুরুল হককে জেল খানায় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শামসুজ্জোহাকে নির্মম ভাবে হত্যা করার প্রতিবাদে সারা দেশে আন্দোলন বেগবান হয়ে পরে। পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করতে বলে। বঙ্গবন্ধুর জীবনের সর্বোশ্রেষ্ঠ গাইড ছিলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা, সকল নেতারা বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি নেওয়ার অনুরোধ করলেও বঙ্গমাতা সেদিন জেলখানায় স্পস্ট জানিনেয় আসেন নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে জেল থেকে বের হবেন না। অবশেষে ১৯৬৯ সালে ২২ সে ফেব্রুয়ারী বঙ্গবন্ধুকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারী ছাত্রনেতা তুফায়েল অহম্মেদ পল্টন ময়দানে জাতির জনকে বঙ্গবন্ধু উপাদিতে ভূষিত করেন । এর পরের বছর ৩রা মার্চ ১৯৭০ সালে আ স ম আব্দুর রব বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনকের উপাধি দেন। বঙ্গবন্ধু বঙ্গমাতার পরামর্শ শুনতেন তাঁর উপড় আস্তা রাখতেন।

 

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নারী কবিতার সেই অমর বানীই যেন বঙ্গবন্ধুর জীবন এবং কর্মে আলোর পথ প্রদর্শক ছিল। কোন কালে এক হয়নিকো বিজয় পুরুষের তরবারি, উৎস দিয়েছে প্রেরণা দিয়েছে বিজয় লক্ষী নারী। বঙ্গবন্ধুর জীবন আলোচনা করলে দেখা যায় জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্র বঙ্গমাতা একজন মহিয়সী নারী হিসেবে ছায়ার মত পাশে থেকে বঙ্গবন্ধুকে শক্তি সাহস এবং উৎসাহ দিয়েছেন ।

 

আমাদের স্বাধীনতার অমর কাব্য ৭ ই মার্চের ভাষণের পটভূমি সম্পর্কে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে অমর একুশে গানের রচয়িতা জনাব আব্দুল গফ্ফার চৌধুরীর নির্মিত শেখ হাসিনা দূর্গম পথযাত্রী ডকুমেন্টারী তে স্বাক্ষাতকার দেএয়ার সময় বলেছিলেন যে, সবাই সে দিন খুব উদ্বিগ্ন ছিল, স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার জন্য, অনেক বড় বড় নেতারা সে দিন বলেছিলেন আজকেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে হবে, কিন্তু বঙ্গমাতা সে দিন বঙ্গবন্ধুকে বাসা থেকে বেড় হবার আগ মুহূর্তে রুমে ডেকে নিয়ে শুধু একটি কথা বলেছিলেন, আপনার দিক নির্দেশনার দিকে জাতি তাকিয়ে আছে, আজকের ভাষণ বাঙ্গালী জাতির ভাগ্য নির্ধারণের ভাষণ, আপনার রাজনৈতিক বিচক্ষণতা, রাজনৈতিক দূর্দর্শীতার উপড় আমার আস্থা আছে, আপনি মন থেকে যা বিশ্বাস করেণ, আপনার উপড় মানুষের যে বিশ্বাস তার উপড় ভিত্তি করে আপনি ভাষণ দিবেন । সত্যই বঙ্গবন্ধু সে দিন ৭ কোটি মানুষের বিশ্বাস এবং তাঁর নিজের বিশ্বাসের উপড় ভিত্তি করেই ভাষণ দিয়েছিলেন, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার দলিল এবং বিশ্বের ইতিহাসে একমাত্র অলিখিত দলিল হিসেবে ওয়াল্ড হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছ।

 

নেলসন মেন্ডেলার সেই রিভনিয়া কোটের তিন ঘন্টার ভাষণ সে দিন দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ এবং কৃঞ্চাঙ্গদের মধ্যে বর্ণবাদ প্রথার বিলুপ্তের দ্বার উন্মোচন করেছিল যা বিশ্বের ইতিহাসে সত্যই বিড়ল অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর ৭ ই মার্চের ভাষণে সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলেও, দেশের স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক মুক্তি, নিরস্ত্র একটি জনগোষ্ঠিকে একটি সুসজ্জিত সামারিক বাহিনীর বিরুদ্ধে কিভাবে যুদ্ধ করতে হবে তার সকল দিক নির্দেশনা ছিল, এবং বঙ্গবন্ধু

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com